প্রাচীন ভারতের বর্ন ও জাতি প্রথা সম্পর্কে আলোচনা করো?

ভূমিকা: –
আর্যরা ছিল ফর্সা অন্যদিকে অনার্যদের গায়ের রঙ ছিল কালো এই ব্যবধানকে স্থায়ী করার উদ্যোশে আর্যদের মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে। এই ভাবে বর্ণ প্রথার উদ্ভব ঘটে। এই প্রসঙ্গে আর্যরা গৌরবর্ণ ও অনার্যরা কৃষ্ণবর্ণ এই পার্থক্য বোঝাতে বর্ণ পথার উদ্ভব ঘটে তবে এই বর্ণ প্রথাই পরবর্তীকালে সমাজে জাতি প্রথার ভিত্তি ভূমি রচনা করে।

চতুর্বর্ণ-
বর্ণ বলতে বৈদিক সমাজের চতুর্বর্ণকে বলা হয়।অর্থাৎ ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় বৈশ্য,শূদ্র এই চারটি বর্ণে বিভক্ত বৈদিক সমাজকে চতুর্বর্ণ বলা হয়।

চতুর্বর্ণের উৎপত্তি-
চতুর্বর্ণ উৎপত্তি প্রসঙ্গে ঋকবেদের পুরুষ সূত্রে বলা হয়েছে আদিপুরষ মুখমন্ডল থেকে ব্রাহ্মণ,বাহুদয় থেকে ক্ষত্রিয়, উরুদেশ বৈশ্য,শূদ্র এবং চরণ যুগল থেকে শূদ্র উৎপত্তি হয়েছে।

চতুর্বর্ণের কার্য বিভাজন –
বেদে চতুর্বর্ণের কার্য বিভাজন অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা যাগ-যজ্ঞ ও পূজা আর্চনা করত ক্ষত্রিয় দের কাজ ছিল দেশ রক্ষা ও শাসন করা,বৈশ্যদের কাজ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি কাজ এবং শূদ্ররা এই তিনটি শ্রেণীর সেবা করতো।

জাতি সম্পর্কে ধারনা-
বৈদিক যুগের উপজাতি গুলির মধ্যে জাতি বৈষম্য না থাকলেও পরবর্তীকালে উপজাতি গুলির ভেঙে পড়তে থাকে। তাই বলা যায় বর্ণপ্রথা বিবর্তনের মাধ্যমে জাতি ভেদ প্রথায় পরিণত হয়।

জাতিব্যবস্থার বিবর্তন-
জাতি ব্যবস্থার উৎপত্তির পর থেকেই ভারতে জাতি ব্যবস্থা বিভিন্ন যুগের মধ্য দিয়ে বিবর্তন হয়েছে। যা নিম্নে আলোচিত হলো।

ঋক বৈদিক যুগ-
বৈদিক সমাজে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্র এই চার শ্রেণীতে বিভক্ত হওয়াটা কোনো জাতিগত ছিলনা। এটি ছিল বর্ণগত কারণ বর্ণপ্রথা বংশানুক্রমিক যেমন ছিল না তেমন বর্ণ পরিবর্তনে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিলনা। তবে উপজাতি গুলি ভাঙতে শুরু করায় জাতি ভেদ প্রথার উদ্ভব ঘটে।

প্রতিবাদী ধর্মের যুগ-
প্রতিবাদী ধর্মের যুগে (600 থেকে 300 খ্রিস্টপূর্ব) বর্ণ ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে জাতি ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলোতে চতুর্বর্ণের সঙ্গে দাস ও অন্যান্য হীন জাতির কথা বলা হয়েছে।

গুপ্ত যুগ-
গুপ্ত যুগে ব্রাহ্মণবাদ যেমন জাতিগত ধর্মের পরিণত হয় তেমনি সমাজে ব্রাহ্মণ জাতির প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়, তবে সমাজে অসবর্ণ বিবাহ প্রচলিত থাকায় বিভিন্ন মিশ্রজাতির সৃষ্টি হতে থাকে।

উপসংহার-
পরিশেষে বলা যায় প্রাচীন ভারতীয় জাতীয় ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য এবং শুদ্রদের অবনম ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠে। তবে পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ মধ্যযুগে জাতিগত বৈষম্য ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে।

Comments