রাণী দুর্গাবতী কে ছিলেন? তার কৃতিত্বের পরিচয় দাও। অথবা রানী দুর্গাবতীর পরিচয় ও তার কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো।"

রানী দুর্গাবতী:- চান্দেল্ল বংশীয় রাজপুত অধিপতি মাহোবার কন্যা ছিলেন দুর্গাবতী। গন্ডোয়ানার শাসক দলপদ শাহের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি একদিকে বুদ্ধিমতী ও সাহসী এবং অপরদিকে দেশপ্রেমিক ও সংস্কৃতিমনস্ক নারী ছিলেন।





দুর্গাবতীর কৃতিত্ব:- রানী দুর্গাবতীর কৃতিত্বের জন্য ইতিহাস তাকে স্মরণ করে রেখেছে। তার উল্লেখযোগ্য কার্যাবলীগুলি হল-



শাসনভার গ্রহণ:- গন্ডোয়ানার রাজা দলপত শাহের মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র সিংহাসনে বসে। নাবালক পুত্র বীর নারায়ণের অভিভাবক হিসেবে বিধবা রানী দুর্গাবতী গন্ডোয়ানা শাসন করতে থাকেন। অতি দ্রুত দুর্গাবতী সকল শ্রেণীর মানুষের শ্রদ্ধা ও সমর্থন লাভ করেন।





বাজ বাহাদুরের আক্রমণ রোধ:- আফগানিস্তানের নেতা বাজ বাহাদুর গন্ডোয়ানা আক্রমণ করলে রানী দুর্গাবতী দক্ষতার সঙ্গে তার আক্রমণ রোধ করেন। পরবর্তীতে বাজ বাহাদুর আরো কয়েকবার গন্ডোয়ানা আক্রমণ করে, কিন্তু রানীর কাছে তার বাহিনী পরাজিত হয়।



অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষতা:- রানী দুর্গাবতী প্রতিটি যুদ্ধে জয়লাভ করলেও প্রচুর অর্থ ব্যয় হতো এই সকল যুদ্ধে। ফলে গন্ডোয়ানার রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় দুর্গাবতী নিজের রাজ্যে অভিযান চালিয়ে ক্ষুদ্র জমির মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করে গন্ডোয়ানার রাজকোষ পরিপূর্ণ করেন।





আকবরের আক্রমণ মোকাবিলা:- মোগল বাদশা আকবর সম্পত্তি লুঠ করার উদ্দেশ্যে ১৫৬৪ সালে সেনাপতি আসফ খা- র নেতৃত্বে গন্ডোয়ানা অভিযান করেন। আসফ খা -র নেতৃত্বে মোগল বাহিনী গন্ডোয়ানা আক্রমণ করলে দুর্গাবতী পরাজিত হন। তাসত্বেও দুর্গাবতীর সাহস ও বীরত্বের পরিচয় পাওয়া যায় এই যুদ্ধে।



দুর্গাবতীর প্রতিরোধ:- রানী দুর্গাবতী মোগল আক্রমণের কথা জানতে পারলেও তিনি পালিয়ে যান নি। অসীম সাহস নিয়ে দুর্গাবতী মোগল বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। যুদ্ধের প্রথমে মোগল বাহিনী পরাজিত হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হলে অন্ধকার নেমে আসে এবং দুর্গাবতীর বাহিনী অসুবিধায় পড়ে। তাই দুর্গাবতী ফিরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসেন।



যুদ্ধের পরিণতি:- অবশেষে মোগল বাহিনী পিছন থেকে তীর নিক্ষেপ করে দুর্গাবতীর ওপরে। তীরের আঘাতে আহত হয়ে দুর্গাবতী মনে করেন, চোরের মতো বাঁচার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেষ্ঠ। তাই তিনি নিজের ছুড়ির আঘাতে আত্মহত্যা করেন। এভাবে মোগল বাহিনী যুদ্ধে জয় লাভ করে এবং গন্ডোয়ানা দখল করে।



মন্তব্য:- পরিশেষে বলা যায় যে, রানী দুর্গাবতী নিজের রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সাহস ও শক্তি নিয়ে যেভাবে মোগল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাতে তাঁর বীরত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। বীরাঙ্গনা রাজপুত রানীর মতোই মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।

Comments

Popular posts from this blog

ডেভিড স্টনের ব্যবস্থাপক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Write down the techniques for effective reading and the reading strategies that are useful.

প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লেখো।Nature/Characteristics of Classical Conditioning . Educational implications of Classical Conditioning.