ক্রিয়া পদ : অর্থ ও শ্রেণিবিভাগ।

ক্রিয়া পদ : অর্থ ও শ্রেণিবিভাগ। 

ক্রিয়াপদ কাকে বলে :-
যে পদ দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদনা করা হয়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে।

অন্যভাবে ক্রিয়াপদ কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায়, বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোনো পুরুষ কর্তৃক নির্দিষ্ট কালে কোনো কার্যের সংঘটন বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে। 

ক্রিয়াপদের উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় - 

সুব্রত বই পড়ছে।
সুব্রত আগামী দিনে ইউটিউব এ ক্লাস করাবেন।

ক্রিয়াপদের বৈশিষ্ট্য :-
১ - বাক্য গঠনের জন্য ক্রিয়াপদ খুবই অপরিহার্য।

২ - যে কোনো বাক্যে ক্রিয়াপদ অবশ্যই থাকবেই।

৩ - ক্রিয়াপদ কখনো কখনো বাক্যে নিহিত বা অনুক্ত থাকতে পারে। একে অনুক্ত ক্রিয়াপদ বলে।

যেমন- আজ প্রচণ্ড শীত = আজ প্রচণ্ড শীত (অনুভূত হয়), ইনি আমার বড় বোন = ইনি আমার বড় বোন (হন)ইত্যাদি।

ক্রিয়াপদের গঠন :-
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। আমরা জানি পড়া, খাওয়া, করা, যাওয়া এগুলো ক্রিয়াবাচক শব্দ।


যেমন - 'পড়া' ক্রিয়া শব্দটিকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দাঁড়ায় পড়+ 'আ' এখানে পড়’ হলো মূল অংশ বা ধাতু' আর 'আ' হলো বিভক্তি। অর্থাৎ ক্রিয়াপদের দুটি অংশ ধাতু ও বিভক্তি।

ক্রিয়াপদ কত প্রকার ও কি কি :-
ক্রিয়াপদের প্রকারভেদ বিভিন্নভাবে করা যেতে পারে। যেমন -

আমাদের ভাব প্রকাশের দিক থেকে ক্রিয়া পদকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-

১ - সমাপিকা ক্রিয়া এবং

২ - অসমাপিকা ক্রিয়া।

সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া ছাড়াও বিবিধ অর্থে ক্রিয়াকে বিভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন -
সকর্মক ক্রিয়া,
অকর্মক ক্রিয়া,
দ্বিকর্মক ক্রিয়া,
প্রযোজক ক্রিয়া,
যৌগিক ক্রিয়া ও
মিশ্র ক্রিয়া।

সমাপিকা ক্রিয়া কাকে বলে :-
যে সব ক্রিয়া পদের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে মনের ভাব প্রকাশিত বা উল্লেখিত হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।

যেমন - কমলা স্কুল থেকে ফিরে খেলতে গেল। টুম্পা সকাল বেলা পড়তে বসল।

ওপরের দুটি বাক্যে 'খেলতে' এবং 'বসল' ক্রিয়াপদের দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পাচ্ছে। সুতরা এই দুটি পদ সমাপিকা ক্রিয়া।

অসমাপিকা ক্রিয়া কাকে বলে :-
যে ক্রিয়াপদের দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।

যেমন - কমলা স্কুল থেকে ফিরে খেলতে গেল। টুম্পা সকাল বেলা পড়তে বসল।

ওপরের দুটি বাক্যে ‘ফিরে' এবং 'পড়তে’ ক্রিয়াপদ দুটির দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না, তাই এই দুটি অসমাপিকা ক্রিয়া।


যেকোনো বাক্যের শেষে বসে সমাপিকা ক্রিয়াপদ এবং বাক্যের মাঝখানে বসে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ।

সকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে :-
যে সব ক্রিয়ার কর্ম আছে বা থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।

যেমন - টুম্পা বই পড়ে। ববিতা ভাত খায়। সঞ্জয় দাবা খেলে।

এই বাক্যগুলিতে 'বই', 'ভাত', 'দাবা'—শব্দগুলি কর্ম। তাই ক্রিয়াগুলি সকর্মক ক্রিয়া। ক্রিয়ার ওপর কী দিয়ে বাক্যকে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই ক্রিয়ার কর্ম।

অকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে :-
যে সব ক্রিয়ার কর্ম থাকে না, তাদের অকর্মক ক্রিয়া বলে।

যেমন - আমি যাই। ললিতা পড়ে। তপন ঘুমায়।

এই বাক্যগুলিতে কর্ম নেই, তাই এরা অকর্মক ক্রিয়া। কারণ কী খাই, কী পড়ে, কী ঘুমায় প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর পাওয়া যায় না।

দ্বিকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে :-
যে সব ক্রিয়ার দুইটি কর্মপদ থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলা হয়ে থাকে।

যেমন - শিক্ষিকা ছাত্রীকে ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।

এই বাক্যটিতে দুটি কর্ম - ছাত্রীকে এবং ব্যাকরণ। এদের মধ্যে একটি মুখ্য কর্ম অপরটি গৌণ কর্ম। সাধারণত বস্তুবাচক ও অপ্রাণীবাচক শব্দ মুখ্য কর্ম এবং প্রাণীবাচক শব্দ গৌণ কর্ম হয়ে থাকে।

প্রযোজক ক্রিয়া কাকে বলে :-
যে সব ক্রিয়া এক জনের প্রযোজনাকে অন্য কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয়, সেই সব ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলা হয়ে থাকে।

সংস্কৃত ব্যাকরণে প্রযোজক ক্রিয়াকে ণিজন্ত ক্রিয়াও বলা হয়ে থাকে।

প্রযোজক কর্তা : যে সব ক্রিয়া সাধারণত প্রযোজনা করে, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।

প্রযোজ্য কর্তা : যাকে দিয়ে বা যার সাহায্যে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত বা সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন

যেমন - মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

এখানে মা - প্রযোজক কর্তা, শিশুকে - প্রযোজ্য কর্তা এবং চাঁদ দেখাচ্ছেন প্রযোজক ক্রিয়া।

প্রযোজক ক্রিয়ার গঠন :

প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু = মূল ক্রিয়ার ধাতু + আ যেমন মূল ধাতু √ হাস + আ= হাসা (প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু)। হাসাচ্ছেন বিভক্তি = হাসাচ্ছেন (প্রযোজক ক্রিয়া)।

যৌগিক ক্রিয়া কাকে বলে :-
সাধারণত একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একসাথে সম্প্রসারিত বা বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তবেই তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন -

তাগিত দেওয়া অর্থে - ঘটনাটা শুনে রাখ।

নিরন্তরতা অর্থে - তিনি বলতে লাগলেন।

কার্যসমাপ্তি অর্থে - ছেলে মেয়েরা শুয়ে পড়ল।

আকস্মিকতা অর্থে - সাইরেন বেজে উঠল।

অভ্যস্ততা অর্থে - শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে।

অনুমোদন অর্থে - এখন যেতে পার।

মিশ্র ক্রিয়া কাকে বলে :-
বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধনাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর. হ. দে, পা, যা, কাট, গা, ছাড় ধর, মার প্রভৃতি ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদ বিশেষ বিশেষ অর্থে মিশ্র ক্রিয়া গঠন করে। যেমন -

বিশেষ্যের পরে - আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। ছেলেটি গোল্লায় গেছে।

বিশেষণের পরে - তোমাকে দেখে বিশেষ আনন্দ হলাম।

ধ্বনাত্মক অব্যয়ের পরে - মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।

©Shiksha Kuthir 

Comments

Popular posts from this blog

ডেভিড স্টনের ব্যবস্থাপক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Write down the techniques for effective reading and the reading strategies that are useful.

প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লেখো।Nature/Characteristics of Classical Conditioning . Educational implications of Classical Conditioning.