অভিবাসীদের সমস্যা

অভিবাসীদের সমস্যা

চরম ডানপন্থীদেরকে থামাতে হলে নেদারল্যান্ডকে অবশ্যই নিজেদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোতে নজর দিতে হবে 
ইউরোপীয়ান রাজনীতিতে অভিবাসনের সমস্যা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টের সরকারের পতনের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়েছে। ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা রুট্টে উদ্বাস্তুদের একটি প্রস্তাবিত নীতির জন্য তার জোট সঙ্গীদের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর ইস্তফা দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, এটিতে দুটি স্তর ছিল — যারা সংঘাতের পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাময়িকভাবে পালিয়ে আসছেন এবং যারা অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে পাকাপাকিভাবে পালিয়ে আসছেন — এবং নেদারল্যান্ডে বসবাসকারী স্বীকৃত উদ্বাস্তুদের সন্তানদেরকে তাদের বাবা-মায়েদের কাছে থাকার জন্য দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। রুট্টের মধ্য-ডানপন্থী জোট সঙ্গী পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি দুই স্তরীয় সিস্টেমকে সমর্থন করলেও দুই বছর অপেক্ষা করার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার বিরোধীতা করেছে। এই অবস্থায় রুট্টে আপস করার পরিবর্তে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এমনকি রাজনীতি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও তিনি এরকম কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্যই “টেফলন মার্ক” হিসাবে পরিচিত ছিলেন। রাজনীতিতে তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৭.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ নেদারল্যান্ডকে তিনি উত্তর ইউরোপের একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। তার হাত ধরে ইউরোপে একটি শক্তিশালী দেশ হয়ে ওঠে নেদারল্যান্ড। তবে নানা বিতর্কের মধ্যে পড়ে তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সুবিধা নিয়ে ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ যেভাবে দরিদ্র পরিবারগুলোর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, তাতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। অন্যদিকে তিনি দূষণ কমাতে উদ্যোগী হতে গিয়ে কৃষকদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। সব শেষে উদ্বাস্তু সংক্রান্ত নীতির জেরে তার পতন ঘটল।

ইউরোপের অধিকাংশ জায়গার মতো, নেদারল্যান্ডেও অনেক অভিবাসী আছে। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের ২১,০০০ এরও বেশি লোকজন সেদেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। সেই বছর নেদারল্যান্ডে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছিল চার লক্ষ। অভিবাসনের জেরে নেদারল্যান্ডে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই সেদেশে জীবনযাপনের খরচ নিয়ে একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার জেরে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে। ইউরোপের অনেক দেশে চরম-ডানপন্থী এবং সংরক্ষণশীল দলগুলো তাদের কড়া অভিবাসন-বিরোধী নীতির জেরে রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে। ফ্রান্সে ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাক্রনের দ্বিতীয় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ভোটের অভিযান শেষ করেছেন মারিন লে পেন। নয়া-ফ্যাসিবাদী উৎসের জন্য পরিচিত একটি রাজনৈতিক দল বর্তমানে ইটালিতে ক্ষমতায় রয়েছে। অন্যদিকে গ্রিসে কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিসের সংরক্ষণশীল সরকার অভিবাসী-বিরোধী নিষ্ঠুর নীতি গ্রহণ করেছে। সেদেশ থেকে অভিবাসীদেরকে তুরস্কে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, রুট্টেও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তবে শুধুমাত্র অভিবাসীদের ওপর নজর দেওয়া একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী নেদারল্যান্ডে সামাজিক বিভাজনকে আরও গভীর করে তুলবে। যে উদ্বাস্তুরা আশ্রয় খুঁজছেন, তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নেদারল্যান্ড এবং ইউরোপের রাজনৈতিক নেতাদেরকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এর পাশাপাশি কীভাবে জীবনযাপনের খরচ, ঘরবাড়ি নিয়ে সমস্যা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা যায়, সেই রাস্তাও তাদের খুঁজে বের করতে হবে। চরম-ডানপন্থী দলগুলো অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য অভিবাসীদের দায়ী করছে। তাই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করা আশু প্রয়োজন। 

Comments

Popular posts from this blog

ডেভিড স্টনের ব্যবস্থাপক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Write down the techniques for effective reading and the reading strategies that are useful.

প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লেখো।Nature/Characteristics of Classical Conditioning . Educational implications of Classical Conditioning.