শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক | Relation Between Education and Sociology
শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক | Relation Between Education and Sociology
সমাজ বিজ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সমাজ বিজ্ঞান এবং শিক্ষা এ অপরের পরিপূরক। সমাজ পরিবর্তনশীল এই পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে ব্যক্তিকে অভিযোজনেকের সহায়তা করে শিক্ষা। বর্তমান শিক্ষার হাত ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রম উন্নয়নের ফলে সমাজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছে। সুতরাং, সমাজের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, নিয়ন্ত্রণ,গতিশীলতা এই সমস্ত কিছু জন্য শিক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানের কাজ হল ব্যক্তিকে তার পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি বিধানের সাহায্য করা। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা। শিক্ষা পরিকাঠামো, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে।
1) সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষার লক্ষ্য: আধুনিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল, প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে সমাজের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষার এই লক্ষ্য বিশেষ ভাবে সমাজবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। বৰ্তমান শিক্ষার লক্ষ্য শুধুমাত্র শিক্ষার্থীকে জ্ঞান সরবরাহ করা নয়। শিক্ষার্থী যাতে আদর্শ সামাজিক জীব হিসেবে জীবনযাপন করতে পারে সে বিষয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ায়। যাতে ভবিষ্যতে সে নিজের এবং সমাজের কল্যাণ সাধন করতে পারে।
2) সমাজবিজ্ঞান ও পাঠক্রম: পাঠক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সমাজবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রভাব পড়েছে। শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত চাহিদা, সমাজের সমসাময়িক ও ভবিষ্যত চাহিদার মধ্যে সমন্বয় রেখে পাঠক্রম নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান শিক্ষার পাঠক্রমে সাধারণ শিক্ষামূল বিষয়গুলি ছাড়াও অবসর বিনোদনমূলক কার্যাবলীও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুতরাং, পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের সমাজ জীবনের উপযোগী করে তুলবে।
3) সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষার তাৎপর্য: আধুনিক শিক্ষাকে একপ্রকার সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া একদিকে যেমন সমাজ-সংস্কৃতির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে তেমনি অন্যদিকে সামাজিক অগ্রগতিতে সাহায্য করে। সুতরাং, বলা যায় শিক্ষার আধুনিক এই অর্থ ও গতিশীল তাৎপর্য সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্বের দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছে।
4) সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষণ পদ্ধতি: আধুনিক শিক্ষায় কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার নীতিকে গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, সামাজিক উপযোগিতা সম্পূর্ণ কার্যাবলীতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া, যেখানে শিক্ষার্থীর মধ্যে সক্রিয়তা আসবে। এই কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষণ শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কর্মদক্ষতা অর্জনেও সহায়তা করবে।
5) সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষালয়: আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যালয়েকে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয় | John Dewey বলেছেন “School is a purified,simplified and better balanced society”. আবার আধুনিক শিক্ষাতত্বে শিশুর সামাজিকীকরণকে শিক্ষালয়ের প্রধান কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই বলা যায় শিক্ষালয় গুলিকে সাংগঠনিক দিক থেকে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণে রূপান্তরিতকরণ এবং সেগুলোর কর্মসূচির উপর সামাজিক তাৎপর্য অর্পণ উভয় প্রক্রিয়াই সমাজবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
6) সমাজবিজ্ঞান ও বিদ্যালয় পরিচালনা: বিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা যেমন পরিবর্তন ঘটছে, তেমনি বিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত ধারণারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয় গুলি পরিচালনার ব্যাপারে প্রচলিত সামাজিক পরিচালনার রীতিকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
7) সমাজবিজ্ঞান ও শিক্ষক: প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থায় ছিল শিক্ষক কেন্দ্রিক। কিন্তু আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা হল শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষককে Friend, Philosopher and Guide বলা হয়। আধুনিক শিক্ষায় একজন আদর্শ শিক্ষকের মধ্যে যে গুণাবলী গুলি প্রত্যাশা করা হয় এবং যে দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করা হয়েছে তার সবই সমাজবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষকের দায়িত্বের যে পরিবর্তন ঘটেছে তাও অনেকাংশে সমাজবিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত।
Comments
Post a Comment