উদাহরণাহ বিভিন্ন পাঠক্রম আলোচনা করো।

উদাহরণাহ বিভিন্ন পাঠক্রম আলোচনা করো 

পাঠক্রমের শ্রেণিবিভাগ
পাঠক্রমকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়। কোনো কোনো শিক্ষাবিদ পাঠক্রমকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করেছেন।যেমন — [1] লুক্কায়িত পাঠক্রম এবং [2] লিখিত পাঠক্রম।

[1] লুক্কায়িত পাঠক্রম : ২য় পাঠক্রমে প্রোজেক্ট বা অ্যাসাইনমেন্টের কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞানবৃদ্ধি, দক্ষতার বিকাশ এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বিষয়ে প্রত্যাশা করা হয়। কিন্তু ওই প্রত্যাশাগুলি ব্যক্ত হয় না বা পাঠক্রম পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয় না বলেই তাকে লুক্কায়িত পাঠক্রম বলে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রবেশ করলে, উঠে দাঁড়ানো, বিদ্যালয়ের কোনো কাজে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতা—এসবই লুক্কায়িত পাঠক্রমের বিষয়।©shikshakuthir

[2] লিখিত পাঠক্রম : নির্দিষ্ট শিখন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, বিষয়বস্তু ও অভিজ্ঞতা নির্বাচনের মাধ্যমে বিশেষ শিক্ষণ কৌশল প্রয়োগে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপনের দ্বারা পূর্বপরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত যে পাঠক্রম বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুসৃত হয়, তাকে লিখিত পাঠক্রম বলে। এই ধরনের পাঠক্রমের পাঁচটি মূল বিভাগ হল —
(i) অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম
(ii) জীবনকেন্দ্রিক ও অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম
(iii) কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রম 
(iv) কেন্দ্রীয় পাঠক্রম 
(v) বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম 

নীচে এগুলির সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল। 

[1] অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম : শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত উদ্দেশ্যমুখী বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে যে পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়, তাকে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম বলে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুযায়ী সাজানাে হয়। এরমধ্যে জ্ঞানমূলক, কর্মমুলক ইত্যাদি সব ধরনের অভিজ্ঞতাকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্তর্ভুক্ত অভিজ্ঞতাগুলি আবার প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষ—দু-ধরনের হতে পারে কোনাে শিক্ষার্থী কাজে অংশগ্রহণ করে সেই কাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে, তাকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলা হয়। অন্যদিকে গ্রন্থ পাঠ করে বা কোনাে অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে শুনে কোনাে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে, তাকে পরােক্ষ অভিজ্ঞতা বলা হয়। ©shikshakuthir

ছাত্রছাত্রীরা পরিকল্পিত পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা লাভ করে, তারই প্রতিফলন হল অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম। অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রমকে রূপায়িত করার জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা। 

[2] জীবনকেন্দ্রিক ও অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম : যে পাঠক্রমে অতীত সংস্কৃতির সংরক্ষণ, শিক্ষার্থীর বর্তমান জীবনের চাহিদা পূরণ এবং ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির প্রয়াসের প্রতিফলন ঘটানাে হয়, তাকে জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রম বলে। জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রমে ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্গে সমাজস্বার্থের পরিপূর্ণ ও সার্থক সমন্বয় ঘটানাে হয়। ওই পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর জীবনপ্রক্রিয়া এবং জীবনপদ্ধতি উভয়ের ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। 

যে-পাঠক্রমে শেখার বিষয়সমূহকে ছােটো ছােটো অংশে বিভক্ত -করে অখণ্ডভাবে সজ্জিত করা হয়, তাকে অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম বলে। গতানুগতিক পাঠক্রমের বিষয়ের বিচ্ছিন্নতাকে দূর করার জন্য অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়। ফ্রয়েবেল খেলাকে কেন্দ্র করে শিশুকে বিভিন্ন বিষয় শেখাবার কথা বলেছেন। গান্ধিজি তার বুনিয়াদি শিক্ষার ক্ষেত্রে হস্তশিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা বলেছেন। 

[3] কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রম : শিক্ষায় সক্রিয়তার নীতিকে ভিত্তি করে গড়ে তােলা হয়েছে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম। এই জাতীয় পাঠক্রমের মূলকথা হল— শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে কর্মের মাধ্যমে পরিবেশন করা। শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করবে। কেবলমাত্র বই মুখস্থ করার পরিবর্তে শিক্ষার্থী তার চাহিদা, রুচি, সামর্থ্য অনুযায়ী বাস্তবে বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করবে। সেই কারণে এই জাতীয় পাঠক্রমে বিভিন্ন ধরনের সক্রিয়তামূলক কার্যাবলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।©shikshakuthir

[4] কেন্দ্রীয় পাঠক্রম : বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সমন্বয়ে যে বিশেষ ধরনের পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়, তাকে কেন্দ্রীয় পাঠক্রম (Core curriculum)বলে । শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্মদক্ষতা গড়ে তােলা এবং তাদের জীবনাদর্শ গঠনের ক্ষেত্রে এই জাতীয় পাঠক্রম বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই ধরনের পাঠক্রমে বিষয়কেন্দ্রিক জ্ঞানের সঙ্গে সমাজকেন্দ্রিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানাে হয়। এই পাঠক্রমের মূল উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বহুমুখী অনুরাগের সার ঘটানাে। এই জাতীয় পাঠক্রমে বিশেষধর্মী জ্ঞান পরিবেশন না-করে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করা হয়। 

[5] বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম : যে পাঠক্রমের মাধ্যমে কতকগুলি বিষয়ে পুথিগত জ্ঞানদানের ব্যবস্থা করা হয়, তাকে বলে বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম বা গতানুগতিক পাঠক্রম। এই পাঠক্রমটি মানসিক শৃঙ্খলার তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তােলা হয়েছে। এই পাঠক্রম আংশিকভাবে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করে। তবে এটি ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক জীবনের কোনাে দিকের বিকাশে সাহায্য করে না। এই পাঠক্রমটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত। এই পাঠক্রমে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এই পাঠক্রমে কেবল কতকগুলি তথ্য পরিবেশন করা হয়। এর মাধ্যমে জ্ঞানের সমন্বয়সাধন হয় না।©shikshakuthir

Comments

Popular posts from this blog

ডেভিড স্টনের ব্যবস্থাপক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Write down the techniques for effective reading and the reading strategies that are useful.

প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লেখো।Nature/Characteristics of Classical Conditioning . Educational implications of Classical Conditioning.