শিক্ষাক্ষেত্রে সাবিত্রীবাই ফুলের অবদান লেখো

শিক্ষাক্ষেত্রে সাবিত্রীবাই ফুলের অবদান লেখো

শিক্ষাক্ষেত্রে সাবিত্রীবাই ফুলের অবদান লেখো
সাবিত্রীবাই ফুলে ভারতীয় সংস্কারবাদী নারী জাগরণের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভারতীয় নারী শিক্ষিকা হিসেবে সমাদৃত। ব্রিটিশ যুগে মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁর স্বামী জ্যোতিবা ফুলের সঙ্গে নারীদের সাম্যতা ও নারীশিক্ষার বিস্তারে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা নেন। তাঁর অবদানগুলি হল-

(1) প্রথম নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সাবিত্রীবাই ফুলে ও তাঁর স্বামী জ্যোতিরাও ফুলে 1848 সালে পুনের ভিদে ওয়াদায় (Bhide wada) যে মেয়েদের স্কুল স্থাপন করেন, তা ভারতীয়দের দ্বারা তৈরি প্রথম নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরপর 1849 সালে সাবিত্রীবাই ও ফতিমা শেখ-এর যৌথ প্রচেষ্টায় মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

(2) শিক্ষা সংক্রান্ত ট্রাস্ট: 1850 সালে সাবিত্রীবাই ও তাঁর স্বামীর যৌথ উদ্যোগে পুনেতে দুটি শিক্ষা সংক্রান্ত ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ট্রাস্ট দুটির উদ্দেশ্য ছিল মাহার (Mahars) এবং মঙ্গ (Mangs) ইত্যাদি উপজাতি শ্রেণির মানুষজনের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। পরবর্তীকালে এই দুটি ট্রাস্টের অধীনে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

(3) নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: পরবর্তীকালে 1851 সালে তাঁরা তিনটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং 150 জন শিক্ষার্থীদের সাবিত্রীবাই পড়াতেন। এ ছাড়াও তাঁরা দুজনে মিলে মোট 18 টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

(4) পাঠদান পদ্ধতি: সাবিত্রীবাই ফুলের পড়ানোর পদ্ধতিতে নতুনত্ব ছিল এবং তাঁর পাঠদান পদ্ধতি তৎকালীন মহারাষ্ট্রের সরকারি বিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতির থেকে পৃথক ছিল। যা যথেষ্টই উন্নত ছিল। ফলস্বরূপ বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী সাবিত্রীবাই-এর স্কুলে ভরতি হতে শুরু করেছিল। তিনি শিক্ষার্থীদের লাঠি ও ভিজে মাটিতে লেখার কথা বলেন।

(5) পড়াশোনার ক্ষেত্রে শ্রেণিবৈষম্যের বিরোধিতা: তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু নিম্নশ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অধিকার ছিল না। এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধী ছিলেন তিনি। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনি এবং তাঁর স্বামী সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি তাঁর বিদ্যালয়ে নিম্নবর্ণের মানুষেরা যাতে পড়াশোনা করতে পারে, তার ব্যবস্থা করেছিলেন।

(6) শিক্ষার লক্ষ্য: সাবিত্রীবাই ফুলের মতে, শিক্ষার লক্ষ্য হল মানবতাবাদের বিকাশ। দলিত সম্প্রদায়ের শিক্ষার ব্যাপারে স্বামী ও স্ত্রীর অবদান শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(7) পাঠক্রম: সাবিত্রীবাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয় ভিদে ওয়াদায় গতানুগতিক পাশ্চাত্য শিক্ষার পাঠক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, যেখানে গণিত, বিজ্ঞান এবং। সমাজবিদ্যার বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

(8) বিদ্যালয়ের অন্যান্য সুযোগসুবিধা: শিক্ষার্থীদের গল্পের মাধ্যমে, কবিতা পাঠের সাহায্যে আকর্ষনীয়ভাবে শিক্ষাদানের ব্যবস্থার পাশাপাশি খেলাধুলার ব্যবস্থাও ছিল বিদ্যালয়ে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিটিং-এর ব্যবস্থাও ছিল। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিশুদের পুষ্টির জন্য তাদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করা হত। 

সুতরাং মহারাষ্ট্রের শিক্ষার ক্ষেত্রে সাবিত্রীবাই ও তাঁর স্বামী জ্যোতিরাও ফুলের অবদান সত্যিই যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাবিত্রীবাই ফুলে তৎকালীন সময়ে একজন মহিলা শিক্ষাবিদ হিসেবে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রে নয়, ভারতের শিক্ষার ক্ষেত্রেও সমানভাবে অবদান রেখেছেন।

Comments

Popular posts from this blog

ডেভিড স্টনের ব্যবস্থাপক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Write down the techniques for effective reading and the reading strategies that are useful.

প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লেখো।Nature/Characteristics of Classical Conditioning . Educational implications of Classical Conditioning.