জৈন ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে কী ধরনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ছিল?

 জৈন ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে সম্পর্ক কী ধরনের ছিল?

অথবা, জৈন ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে কী ধরনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ছিল?

উত্তর:জৈন ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে সম্পর্ক


সূচনা: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বৈদিকধর্মের আড়ম্বরপ্রিয়তা, জাতিভেদ, তন্ত্রমন্ত্র প্রভৃতির বিরুদ্ধে কতকগুদি প্রতিবাদী ধর্মমতের উত্থান ঘটেছিল। জৈন ও বৌদ্ধধর্ম ছিল এর মধ্যে অন্যতম। এই দুই ধর্মমতের মধ্যে বেদ কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

সাদৃশ্য

[1] জৈন ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল বৈদিকধর্মের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধর্ম হিসেবে। বৈদিকধর্মের জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা, মূর্তিপূজা, আড়ম্বরপূর্ণ যাগযজ্ঞ প্রভৃতির তীব্র বিরোধিতা জৈন ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে দেখা যায়।©shikshakuthir

[2] উভয় ধর্মের প্রবর্তকরা ছিলেন ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের মানুষ।

[3] উভয় ধর্মে মানুষকে কর্মফল ও জন্মান্তরবাদের হাত থেকে মুক্ত করার কথা প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল।

[4] জৈন ও বৌদ্ধধর্মে অহিংসা নীতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।©shikshakuthir

[5] উভয় ধর্মের প্রচারকগণ প্রাকৃত ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের ধর্মমত তুলে ধরেছিলেন। এ ছাড়া পূর্ব ভারতে উভয় ধর্মের বিকাশ ঘটেছিল এবং বন্ধু রাজা ও ধনী সম্প্রদায়ের মানুষ এই ধর্মগুলির বিস্তারে সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং, দেখা যায় বহু ক্ষেয়ে জৈন ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে মিল ছিল।

বৈসাদৃশ্য

জৈন ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়।

[1] বৌদ্ধধর্মে অহিংসার কথা বলা হলেও জৈনরা কঠোরভাবে অহিংসা নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। তারা ক্ষুদ্র কীট পতঙ্গকেও হত্যা করা পাপ মনে করত।

[2] বৌদ্ধধর্মে চরম কৃষ্ণসাধন না করে ভোগবাদ ও কৃষ্ণসাধনের মাঝামাঝি পথ অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জৈনধর্মে শুধুমাত্র চরম কৃষ্ণসাধনের পথকেই গ্রহণ করা হয়েছিল।©shikshakuthir

[3] বৌদ্ধধর্ম ভারতের অভ্যন্তরে জৈনধর্মের তুলনায় বেশি প্রসারিত হয়েছিল এবং দেশের বাইরে বস্তু দেশেও বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটে। কিন্তু ভারতে বর্তমানে বৌদ্ধধর্ম প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অপরদিকে জৈনধর্ম সমগ্র ভারতে বৌদ্ধধর্মের মতো প্রসারিত না হলেও এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঙ্গুলে বিরাজমান।

[4] বৌদ্ধধর্ম শুধুমাত্র গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তন ও প্রচার করেছিলেন। কিন্তু জৈনধর্ম ২৪ জন তীর্থংকরের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছিল।

[5] জৈনরা ছিল সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী এবং তারা পৃথিবীর সমস্ত কিছুর মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। কিন্তু বৌদ্ধরা সর্বপ্রাণবাদী ছিল না।

[6] জৈনধর্মে জাতিভেদপ্রথাকে খুব বেশি অগ্রাহ্য করা হয়নি এবং হিন্দুধর্মের বহু রীতিনীতি জৈনরা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম জাতিভেদ ও হিন্দুধর্মীয় রীতিনীতির তীব্র বিরোধী ছিল।©shikshakuthir

Comments

Popular posts from this blog

ডেভিড স্টনের ব্যবস্থাপক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Write down the techniques for effective reading and the reading strategies that are useful.

প্রাচীন অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন প্রতিক্রিয়ার ব্যবহার লেখো।Nature/Characteristics of Classical Conditioning . Educational implications of Classical Conditioning.