Kalyani University UG CBCS NEP 3rd Semester Political Science Major CC-03 PYQ And Answer রাষ্ট্রবিজ্ঞান মেজর তৃতীয় সেমিস্টারের প্রশ্ন উত্তর
Kalyani University UG CBCS NEP Political Science Major CC-03 PYQ And Answer রাষ্ট্রবিজ্ঞান মেজর তৃতীয় সেমিস্টারের প্রশ্ন উত্তর
1.শ্রুতির নিহিতার্থ অর্থ কি?
'শ্রুতি' একটি সংস্কৃত শব্দ, যা √श्रु (শ্রু - শোনা) ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়েছে। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল "যা শোনা হয়েছে"। বৈদিক ঐতিহ্যে 'শ্রুতি' বলতে বোঝায় সেই জ্ঞান বা বাণী যা ঋষিরা তাঁদের গভীর ধ্যানের মাধ্যমে "শুনেছিলেন" বা "উপলব্ধি" করেছিলেন। এই জ্ঞান মানুষের দ্বারা রচিত নয়, বরং এটি অপৌরষেয় (man-made নয়), অর্থাৎ এটি ঈশ্বরের বা দিব্য উৎস থেকে প্রাপ্ত বলে মনে করা হয়।©shikshakuthir
2.প্রাচীন ভারতের শ্রমণবাদের মূল লক্ষ্য কি ছিল?
শ্রমণবাদের মূল লক্ষ্যসমূহ: ১. মুক্তি বা নির্বাণ (মোক্ষ) ২. নৈতিক জীবনযাপন ও অহিংসা (শীল)৩. ধ্যান ও যোগ (সমাধি/ধ্যান)৪. বৈদিক যাগযজ্ঞ ও আনুষ্ঠানিকতার বিরোধিতা৫. জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা ও সামাজিক সাম্য ৬. ব্যক্তিগত মুক্তি ও আত্ম-উন্নতি।
3.প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার দুটি সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য লেখ
প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার দুটি সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:১. ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা: প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তা মূলত ধর্মের ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে 'ধর্ম' ব্যাপক অর্থে কর্তব্য, ন্যায়, ও নৈতিকতাকে বোঝায়, কোনো সংকীর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাস নয়। এখানে, রাজধর্ম রাজার প্রধান কর্তব্য ছিল, যার মাধ্যমে রাজা রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, প্রজাদের রক্ষা এবং ধর্ম ও নৈতিকতা-ভিত্তিক জীবন যাপন নিশ্চিত করতেন। ধর্মকে রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হতো, এবং শাসককে ধর্মের অনুশাসন মেনে চলতে হতো।©shikshakuthir
২. সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব: প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব, যা অনুসারে রাষ্ট্র সাতটি অপরিহার্য অঙ্গ নিয়ে গঠিত। এই অঙ্গগুলি হলো – স্বামী (রাজা), অমাত্য (মন্ত্রী), জনপদ (ভূখণ্ড ও জনগণ), দুর্গ, কোষ (রাজকোষ), সেনা (সৈন্যবাহিনী), এবং মিত্র। এই তত্ত্ব অনুসারে, রাষ্ট্রের কার্যকারিতা এবং শক্তির জন্য এই সাতটি অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অপরিহার্য। সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব রাষ্ট্রকে একটি সামগ্রিক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে, যেখানে প্রতিটি অঙ্গের নিজস্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে
4.প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্র দর্শনের বিকাশে পানিনি কিভাবে অবদান সৃষ্টি করেছিলেন?
পানিনি রাষ্ট্র দার্শনিক ছিলেন না। তবে, গভীরভাবে বিচার করলে দেখা যায় যে, পানিনির ব্যাকরণ বিষয়ক কাজ, বিশেষত তাঁর অষ্টাধ্যায়ী, প্রাচীন ভারতীয় চিন্তাধারা এবং পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র দর্শনের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। সরাসরি রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে কাজ না করলেও, পানিনির ভাষাতত্ত্ব ও ব্যাকরণের অবদান ভারতীয় জ্ঞানকাণ্ডের এমন একটি ভিত্তি স্থাপন করে, যা রাষ্ট্রচিন্তা সহ বিভিন্ন দার্শনিক ও তাত্ত্বিক শাখাগুলির বিকাশে সহায়ক হয়েছিল।©shikshakuthir
5.দন্ড ও দণ্ডনীতির মধ্যে মূল পার্থক্য উল্লেখ কর।
দণ্ড (Danda) ও দণ্ডনীতির (Danda-niti) মধ্যে মূল পার্থক্য বুঝতে হলে, এই শব্দগুলির অর্থ এবং প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার প্রেক্ষাপট অনুধাবন করা প্রয়োজন।
দণ্ড (Danda):'দণ্ড' একটি সংস্কৃত শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ হল লাঠি,Staff, rods বা stick। তবে রাষ্ট্রনীতির প্রেক্ষাপটে 'দণ্ড'-এর অর্থ আরও ব্যাপক ও গভীর। এখানে 'দণ্ড' বলতে মূলত বোঝায়:
শাস্তি (Punishment): অপরাধ বা অন্যায় কাজের জন্য যে শাস্তি বিধান করা হয়, তাকে দণ্ড বলা হয়। এটি হতে পারে শারীরিক শাস্তি, জরিমানা, কারাদণ্ড বা অন্য কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব (Power and Authority): দণ্ড রাজার ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রতীক। দণ্ডের মাধ্যমেই রাজা রাজ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখেন এবং আইন প্রয়োগ করেন। দণ্ড রাজশাসনের অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়।©shikshakuthir
দণ্ডনীতি (Danda-niti):
'দণ্ডনীতি' শব্দটি 'দণ্ড' এবং 'নীতি' এই দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। 'নীতি' মানে হল নীতিমালা, Policy, Science, বা system। সুতরাং, 'দণ্ডনীতি' বলতে বোঝায়:
দণ্ড প্রয়োগের বিজ্ঞান বা নীতি (Science or policy of applying Danda): দণ্ডনীতি হল সেই বিজ্ঞান বা নীতি যা রাষ্ট্রকে কখন, কোথায়, কিভাবে এবং কার উপর দণ্ড প্রয়োগ করতে হবে তা নির্দেশ করে। এটি দণ্ড প্রয়োগের পদ্ধতি, নিয়মকানুন এবং কৌশলের সমষ্টি।
শাসননীতি (Governance Policy): দণ্ডনীতি শুধুমাত্র শাস্তির বিধান নয়, এটি একটি ব্যাপক শাসননীতি। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে রাষ্ট্র পরিচালনা, আইন প্রণয়ন, বিচার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার সামগ্রিক কৌশল।
6.শান্তি পর্বের উপ- পর্ব গুলি কি কি?
শান্তি পর্বের উপ-পর্বগুলি:
রাজধর্ম পর্ব (Rajadharma Parva)
আপদ্ধর্ম পর্ব (Apaddharma Parva)
মোক্ষধর্ম পর্ব (Mokshadharma Parva)
বিবিধবিধি পর্ব (Vividhavidhi Parva)
প্রকৃতি পর্ব (Prakriti Parva)
দানধর্ম পর্ব (Danadharma Parva)
সংশয় পর্ব (Sanshaya Parva)
স্ত্রীপর্ব (Stri Parva - শান্তি পর্বের অন্তর্গত আলোচনা প্রসঙ্গে)
7.মনুর রাজধর্ম তত্ত্বটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
মনুর রাজধর্ম তত্ত্ব একটি বিস্তৃত ও আদর্শবাদী ধারণা। এর মূল কথা হল, রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি, ধর্মের ধারক ও বাহক এবং প্রজাদের সেবক। রাজার প্রধান কাজ হল ধর্ম রক্ষা করা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, প্রজাদের রক্ষা ও কল্যাণ করা এবং সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা। মনুস্মৃতিতে বর্ণিত রাজধর্ম প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং এটি পরবর্তীকালের রাষ্ট্রনীতি ও শাসনব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।©shikshakuthir
8.বুদ্ধ রাজনৈতিক চিন্তায় দীঘা নিকায়া কি?
পালি ত্রিপিটকের অংশ: দীঘা নিকায়া পালি ভাষায় রচিত ত্রিপিটকের সূত্র পিটকের অন্তর্গত। সূত্র পিটক মূলত বুদ্ধ এবং তাঁর প্রধান শিষ্যদের উপদেশাবলীর সংগ্রহ। ত্রিপিটকের অন্য দুটি পিটক হলো বিনয় পিটক (ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের জন্য নিয়মাবলী) এবং অভিধর্ম পিটক (বৌদ্ধ দর্শন ও তত্ত্বের বিশ্লেষণ)।
9.কৌটিল্য কিভাবে তার সপ্তাঙ্গ তত্ত্বে জনপদের ব্যাখ্যা দেন?
কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বে ‘জনপদ’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব, যা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, রাষ্ট্রের সাতটি অপরিহার্য অঙ্গের সমষ্টি। এই সাতটি অঙ্গ সম্মিলিতভাবে একটি রাষ্ট্রকে কার্যকরী ও শক্তিশালী করে তোলে। কৌটিল্য জনপদকে কেবল একটি ভৌগোলিক অঞ্চল বা জনগণের সমষ্টি হিসেবে দেখেননি, বরং এটিকে রাষ্ট্রের একটি জীবন্ত এবং অপরিহার্য অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।©shikshakuthir
10.কৌটিল্যের মতে রাজার আবশ্যিকভাবে অর্জিত গুণগুলি কি?
কৌটিল্যের মতে রাজার শ্রেষ্ঠ অর্জিত গুণাবলী:
যদিও পূর্বের উত্তরে আমরা রাজার অর্জিত গুণাবলীকে বুদ্ধি, চরিত্র, এবং ব্যবহারিক - এই তিনটি বিভাগে ভাগ করেছিলাম, শ্রেষ্ঠ গুণাবলী নির্বাচনে কৌটিল্য সম্ভবত বুদ্ধি ও জ্ঞান সম্পর্কিত গুণাবলী (প্রজ্ঞা) এবং ব্যবহারিক ও কার্যকারিতা সম্পর্কিত গুণাবলী (কর্মদক্ষতা) - এই দুটি বিভাগকে বেশি গুরুত্ব দেবেন। কারণ কৌটিল্যের রাষ্ট্রচিন্তা মূলত ব্যবহারিক এবং ফল-ভিত্তিক, যেখানে কার্যকরী শাসন এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি প্রধান লক্ষ্য।©shikshakuthir
11.কৌটিল্য কিভাবে তার ধারণায় রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক প্রকৃতি চিত্রায়িত করেন?
কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র' মূলত রাষ্ট্র পরিচালনার একটি বিস্তৃত নির্দেশিকা হলেও, এতে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে চিত্রিত হয়েছে। যদিও কৌটিল্যের রাষ্ট্রচিন্তা বাস্তববাদী এবং ক্ষমতা-কেন্দ্রিক হিসাবে পরিচিত, তবুও তিনি জনকল্যাণকে উপেক্ষা করেননি। বরং, তিনি জনকল্যাণকে রাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য এবং রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধির ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
12. কৌটিল্য কিভাবে তার ধারণা এই রাষ্ট্রের জনকল্যাণ মূলক প্রকৃতি চিত্রায়িত করেন?
কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র' মূলত রাষ্ট্র পরিচালনার একটি বিস্তৃত নির্দেশিকা হলেও, এতে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে চিত্রিত হয়েছে। যদিও কৌটিল্যের রাষ্ট্রচিন্তা বাস্তববাদী এবং ক্ষমতা-কেন্দ্রিক হিসাবে পরিচিত, তবুও তিনি জনকল্যাণকে উপেক্ষা করেননি। বরং, তিনি জনকল্যাণকে রাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য এবং রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধির ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ©shikshakuthir
13. ভারতের মধ্যযুগীয় কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় মজলিস ই আম কি ছিল?
ভারতের মধ্যযুগীয় কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় 'মজলিস-ই-আম' (Majlis-i-Am) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ছিল। ফার্সি ও আরবি শব্দ থেকে গঠিত 'মজলিস-ই-আম' কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল "সাধারণের পরিষদ" বা "জনসাধারণের সভা"। মধ্যযুগের ভারতে, বিশেষ করে দিল্লি সুলতানি এবং মুঘল আমলে এই প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় শাসনের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে কাজ করত। মজলিস-ই-আমের ভূমিকা, কার্যাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করলে মধ্যযুগীয় ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
14. বারুনীর রাষ্ট্র তত্ত্বের দুটি মৌল বৈশিষ্ট্য লেখ।
বারুনীর রাষ্ট্র তত্ত্ব, মূলত দিল্লি সুলতানির বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ জিয়াউদ্দিন বারানী কর্তৃক তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'ফতোয়া-ই-জাহান্দারী' (Fatawa-i Jahandari)-তে বিবৃত হয়েছে। বারানী ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর ভারতীয় মুসলিম সমাজে রাষ্ট্র এবং শাসনের প্রকৃতি নিয়ে নিজস্ব ধারণা উপস্থাপন করেন।©shikshakuthir
তাঁর রাষ্ট্র তত্ত্বের দুটি মৌল বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা নিচে আলোচনা করা হলো:
১. ইসলামী আদর্শ ও শরীয়াহ-ভিত্তিক রাষ্ট্র (Islam-Centric State based on Sharia)
২. সুলতানের কেন্দ্রীয় ভূমিকা ও গুণাবলী (Central Role and Qualities of the Sultan)
15. আবুল ফজল কিভাবে তার পাদশাহ এর ধারণাটি ব্যাখ্যা করেন।
আবুল ফজল, মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক, দার্শনিক এবং সভাসদ ছিলেন। তিনি আকবরের শাসনকালে রাজতান্ত্রিক আদর্শ এবং রাজনৈতিক দর্শনকে একটি নতুন রূপ দেন। আবুল ফজল বিশেষভাবে তাঁর 'আইন-ই-আকবরী' (Ain-i-Akbari) গ্রন্থে 'পাদশাহ' (Padshah) ধারণাটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পাদশাহর ধারণাটি কেবল একটি শাসক পদবী ছিল না, বরং এটি ছিল ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব, ন্যায়পরায়ণতা, এবং প্রজাকল্যাণের সমন্বয়ে গঠিত এক গভীর রাজনৈতিক ও দার্শনিক তত্ত্ব।©shikshakuthir
16. আবুল ফজল কিভাবে সমাজস্ত মানুষের শ্রেণীবিভাগ করেছিলেন?
আবুল ফজল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'আইন-ই-আকবরী'-তে তৎকালীন ভারতীয় সমাজের একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছেন। এই গ্রন্থে তিনি শুধু শাসন ব্যবস্থা, রাজস্ব নীতি বা সামরিক সংগঠন নিয়েই আলোচনা করেননি, বরং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েও আলোকপাত করেছেন।আবুল ফজল সমাজের মানুষকে মূলত চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করেছেন, যা নিম্নরূপ:
১. যোদ্ধা শ্রেণী (The Warrior Class)২. জ্ঞানী শ্রেণী (The Wise Class)৩. কারিগর ও বণিক শ্রেণী (The Artisan and Merchant Class)৪. কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী (The Laboring Class)
17. মনুর মতে সত্য কি?
মনুস্মৃতিতে সত্যকে কেবল শাব্দিক অর্থে সীমিত রাখা হয়নি। সত্য এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা শুধু ‘যা বলা হয়’ তাই নয়, বরং ‘যা যথার্থ’ বা ‘যা বাস্তব’ সেই অর্থেও প্রযোজ্য। মনুর মতে, সত্য হলো সেই বাক্য বা কর্ম যা অপরের উপকার করে এবং যা যথার্থ জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত।©shikshakuthir
18. নীতিসরের নিহিতার্থ অর্থ কি?
‘নীতিসর’-এর নিহিতার্থ আরও ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে ‘নীতিসর’ কেবল কিছু নীতির সমষ্টি নয়, বরং এটি সেই মূল নীতিগুলির প্রতিভূ যা একটি আদর্শ সমাজ, রাষ্ট্র বা শাসনব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে। ‘নীতিসর’ হল সেই নির্যাস যা ন্যায়, ধর্ম, কর্তব্য, এবং সুশাসনের ধারণাগুলিকে ধারণ করে এবং যা শাসক ও প্রজাদের পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করে।
19. বুদ্ধের মতে ধর্ম কি?
বুদ্ধের মতে ‘ধর্ম’ (Dharma) একটি অত্যন্ত ব্যাপক এবং গভীর ধারণা, যা বৌদ্ধ দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। ‘ধর্ম’ শব্দটি সাধারণভাবে ‘ধর্মীয় বিধি-বিধান’ বা ‘পূজা-অর্চনা’ অর্থে ব্যবহৃত হলেও, বৌদ্ধ ধর্মে এর তাৎপর্য আরও বিস্তৃত এবং বহুমাত্রিক। বুদ্ধের শিক্ষা এবং দর্শনে ‘ধর্ম’ কেবল একটি বিশ্বাস পদ্ধতি নয়, বরং এটি জীবনের পথ, সত্যের স্বরূপ এবং মুক্তির উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।©shikshakuthir
20. ধর্ম ও দ্বন্দ্বের মধ্যে মূল পার্থক্য চিহ্নিত কর।
‘ধর্ম’ (Dharma) এবং ‘দ্বন্দ্ব’ (Dvandva) উভয়ই ভারতীয় দর্শন এবং সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। যদিও শব্দ দুটি প্রায়শই আলোচনায় আসে, তাদের মধ্যেকার অর্থ এবং তাৎপর্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধর্ম যেখানে একটি ব্যাপক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শ, দ্বন্দ্ব সেখানে বাস্তবতার দ্বৈত প্রকৃতি বা বিপরীত অবস্থাকে নির্দেশ করে।©shikshakuthir
21. কৌটিল্যের মতে জনকল্যাণকর শাসন ব্যবস্থা কি?
জনকল্যাণকর শাসন ব্যবস্থা
কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে একটি জনকল্যাণকর শাসন ব্যবস্থার ধারণা দিয়েছেন। তার মতে, একজন রাজার প্রধান কাজ হল প্রজাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি রাজাকে একজন দক্ষ প্রশাসক, বিচক্ষণ এবং প্রজাবৎসল হতে পরামর্শ দিয়েছেন। কৌটিল্য মনে করতেন যে রাজার উচিত প্রজাদের সুখ-দুঃখের প্রতি নজর রাখা এবং তাদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
22. কৌটিল্য তার দ্বৈত নীতি ধারণাটি কিভাবে ব্যাখ্যা করেন?
দ্বৈত নীতি
কৌটিল্য তার দ্বৈত নীতি ধারণায় রাষ্ট্র এবং রাজার মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন। এই নীতি অনুযায়ী, রাজা রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি প্রজাদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। রাজা তার নিজের স্বার্থের চেয়ে প্রজাদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেবেন। কৌটিল্য মনে করতেন যে একজন রাজার সাফল্য তখনই সম্ভব যখন তিনি প্রজাদের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।
23. ভারতের মধ্যযুগীয় বিচার ব্যবস্থায় মজলিস বার ই আম কি ছিল?
ভারতের মধ্যযুগীয় কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় 'মজলিস-ই-আম' (Majlis-i-Am) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান ছিল। ফার্সি ও আরবি শব্দ থেকে গঠিত 'মজলিস-ই-আম' কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল "সাধারণের পরিষদ" বা "জনসাধারণের সভা"। মধ্যযুগের ভারতে, বিশেষ করে দিল্লি সুলতানি এবং মুঘল আমলে এই প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় শাসনের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে কাজ করত। মজলিস-ই-আমের ভূমিকা, কার্যাবলী এবং গুরুত্ব আলোচনা করলে মধ্যযুগীয় ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
২৪. পারনির মতে জোওয়াবিত কি?
পারনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক এবং লেখক। তিনি "তারিখ-ই-ফিরোজশাহী" নামক গ্রন্থে জোওয়াবিত শব্দটি ব্যবহার করেছেন। জোওয়াবিত বলতে তিনি বুঝিয়েছেন রাষ্ট্রের সেইসব নিয়ম-কানুন যা জনগণের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২৫. জিয়াউদ্দিন বারুনীর আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য
জিয়াউদ্দিন বারুনী তার "ফতোয়া-ই-জাহান্দারী" গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থার কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল:
ন্যায়বিচার: রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শাসককে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ হতে হবে এবং প্রজাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
জনকল্যাণ: রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হবে জনগণের কল্যাণ সাধন করা। শাসককে এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে যা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।©shikshakuthir
২৬. আবুল ফজল এর ইনসান অল কামিল কি?
ইনসান-ই-কামিল (Insan-i-Kamil) একটি সুফি দর্শন। এর অর্থ হল "পরিপূর্ণ মানুষ"। আবুল ফজল, যিনি মুঘল সম্রাট আকবরের একজন সভাসদ ছিলেন, এই দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে একজন আদর্শ মানুষ হলেন সেই যিনি নিজের মধ্যে মানবিক গুণাবলী অর্জন করেছেন এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করেন।
২৭. জিয়াউদ্দিন বারুনি রচিত দুটি গ্রন্থের নাম
জিয়াউদ্দিন বারুনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল:
ফতোয়া-ই-জাহান্দারী
তারিখ-ই-ফিরোজশাহী
২৮. ভারতে মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তা দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য
মধ্যযুগীয় ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল:
ধর্মের প্রভাব: এই সময়ে রাষ্ট্রচিন্তার উপর ধর্মের গভীর প্রভাব ছিল। শাসক এবং প্রজারা উভয়েই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলত।
রাজতন্ত্র: রাজতন্ত্র ছিল এই সময়ের প্রধান শাসন ব্যবস্থা। রাজার হাতেই সর্বময় ক্ষমতা থাকত।
২৯. কৌটিল্য রাজা এবং মন্ত্রীকে মানব দেহের কোন অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন?©shikshakuthir
কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে রাজা এবং মন্ত্রীকে মানব দেহের যথাক্রমে মাথা (King is the head of the body) ও চোখ (Minister is the eye of the body) এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি মনে করতেন যে রাজা হলেন রাষ্ট্রের প্রধান, আর মন্ত্রী হলেন তার চোখ, অর্থাৎ পরামর্শদাতা।
৩০. কৌটিল্য তার ষাড়গুন তত্ত্বের ধারণাটি কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
কৌটিল্য তার ষাড়গুন তত্ত্বে ছয়টি গুণের কথা বলেছেন যা একজন রাজার মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এই গুণগুলি হল:
সন্ধি (Peace)
বিগ্রহ (War)
আসন (Neutrality)
যান (Expedition)
সংশ্রয় (Alliance)
দ্বৈধীভাব (Dual policy)
কৌটিল্য মনে করতেন যে একজন রাজাকে এই ছয়টি গুণ সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী এদের ব্যবহার করতে হবে।©shikshakuthir
৩১. রাজ মন্ডল তত্ত্বে উল্লেখিত যেকোন দুজন রাজার নাম
রাজ মন্ডল তত্ত্বে বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের কথা বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই জন রাজা হলেন:
বিজিগীষু (Vijigishu): যিনি দিগ্বিজয় করতে চান।
বৈরী (Bairi): যিনি শত্রুভাবাপন্ন।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, একজন রাজা তার রাজ্যের নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্য অন্যান্য রাজ্যের শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন।©shikshakuthir
Comments
Post a Comment