সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য ও ব্যর্থতা উল্লেখ কর।
সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য ও ব্যর্থতা উল্লেখ কর।
সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য ও ব্যর্থতা:
ভারতবর্ষে সর্বশিক্ষা অভিযান (Sarva Shiksha Abhiyan) 2001 সালে শুরু হয়েছিল। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল 6 থেকে 14 বছর বয়সের সকল শিশুদের জন্য বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা। এই অভিযান প্রাথমিক শিক্ষার সার্বজনীনতা অর্জন এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
সাফল্য:
বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়ন: এই অভিযানের অধীনে দেশব্যাপী বহু নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে এবং বিদ্যমান বিদ্যালয়গুলির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যে ছিল অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচাগার নির্মাণ এবং খেলার মাঠের ব্যবস্থা।
শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ: বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের অভাব পূরণের জন্য বহু সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ে ভর্তি বৃদ্ধি: সর্বশিক্ষা অভিযানের ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের ভর্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত মেয়েদের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের ভর্তির ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিদ্যালয় ছুট এর সংখ্যা হ্রাস: বিদ্যালয় থেকে শিশুদের বিদ্যালয়ের ছুটের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর কারণ হিসেবে বিদ্যালয়ের উন্নত পরিবেশ, মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা এবং অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিকে উল্লেখ করা যেতে পারে।
সামাজিক ও লিঙ্গ সমতা: এই অভিযান লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষা এবং বিদ্যালয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে তারা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে উৎসাহিত হয়েছেন।
ব্যর্থতা:
শিক্ষার গুণগত মান: ভর্তির হার বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার গুণগত মান আশানুরূপভাবে উন্নত হয়নি। অনেক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষণ সামগ্রী এবং গুণগত শিক্ষকের অভাব রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের দুর্বলতা: বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অনেক শিক্ষার্থী তাদের শ্রেণির উপযোগী জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি।
পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব: অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলির কাজকর্ম এবং শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি ও শিক্ষাদানের পদ্ধতি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।
পরিকাঠামোগত দুর্বলতা: কিছু বিদ্যালয়ে এখনও পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, শৌচাগার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে।
শিক্ষক অনুপস্থিতি: কিছু অঞ্চলে শিক্ষকদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার সমস্যা দেখা যায়, যা পঠন-পাঠনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
আর্থিক সীমাবদ্ধতা: শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও, কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হয়েছে।
কমিউনিটির অংশগ্রহণ: কিছু এলাকায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা প্রত্যাশিত মাত্রায় দেখা যায়নি।
সর্বশিক্ষা অভিযান নিঃসন্দেহে ভারতবর্ষের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের উন্নতির ক্ষেত্রে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এই অভিযানের সাফল্যকে ধরে রাখতে এবং ব্যর্থতাগুলি কাটিয়ে উঠতে হলে শিক্ষার গুণগত মানের উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা এবং পরিকাঠামোগত দুর্বলতাগুলি দূর করা জরুরি। বর্তমানে এই অভিযান 'সমগ্র শিক্ষা অভিযান' এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার লক্ষ্য শিক্ষার সকল স্তরে গুণগত মান উন্নয়ন করা।
Comments
Post a Comment